মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন

নোটিশঃ
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সাংবাদিক  নিয়োগসহ পরিচয় পত্র নবায়ণ চলছে।

১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সহসায় শুরু হচ্ছে অলিপুর-উটতলী খেয়াঘাট সেতু নির্মাণ কাজ

গাজী মহিনউদ্দিনঃ

বহুল প্রতিক্ষিত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা অলিপুর এবং উটতলী খেয়াঘাটে ডাকাতিয়া নদীর উপর দিয়ে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নিমার্ণ কাজ চালু করতে প্রস্তুতি নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ। ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদীর কাছেই জমি ভাড়া নিয়ে শ্রমিকদের থাকার বাসস্থান এবং মালামাল আনার প্রস্তুতি নিয়েছে।

প্রায় দুই শত বছরের পুরনো এ উটতলী খেয়াঘাট দিয়ে দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ দৈনিক এপার থেকে ওপারে নৌকা দিয়ে পারাপার হয়ে আসছে। এতে বিশেষকরে চাকুরিজীবি, শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা সময়মতো গন্তব্য স্থানে পৌছতে বেগ পেয়ে আসছে।

শত বছর ধরে মানুষের দুর্ভোগে কথা চিন্তা করে সেতু নির্মানের জন্য প্রথমে নজরে আসে ফরিদগঞ্জের কৃতিসন্তান পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. নুরুল আমিনের। পরবর্তীতে সেতু অনুমোদনে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ও ফরিদগঞ্জের সংসদ সদস্য সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দেশের চলমান উন্নয়নে দুই উপজেলার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০ সালে ট্রেন্ডার প্রক্রিয়া যান। পরবর্তী বছরে উটতলী খেয়াঘাটের উপর সেতু নির্মাণের জন্য ঢাকা দোহারের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রেন্ডার কাজ পায়। কাজ শুরু না করি গড়িমসি করে সুরমা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. আইয়ুব আলী ২০২২ সালের শুরুতে মালামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে আরো ৬০ কোটি টাকা বেশী বরাদ্দ বাড়ান। ‘ ১৬৭ কোটি টাকার বাজেট বৃদ্ধির পরেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই পাড়ের মানুষ।
গেল মাসে কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজীগঞ্জের সীমান্তবর্তী অলিপুর ও ফরিদগঞ্জের সীমান্তবর্তী ভাজপাড়ের মধ্যবর্তী উটতলী ডাকাতিয়া নদী।

ডাকাতিয়া নদীর উপর দিয়ে নৌকা যোগে দুই পাড়ের মানুষ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার হচ্ছে। আর এতে করে দুই পাড়ের মানুষ জনপ্রতি যাওয়া ও আসার সময় ৫ টাকা করে ইজারাদারকে ও ৫ টাকা করে নৌকার মাঝিকে দিয়ে আসছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ অঞ্চলের অলিপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা উপরের মুন্সীরহাট মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজে আশা-যাওয়ার সময় দৈনিক নগদ টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ ছাড়াও দুই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারে আসা যাওয়া সাধারন মানুষের বিভিন্ন মালামাল নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে খেয়াঘাটে পারাপার অবস্থায় কথা হয় শিক্ষার্থী আলমগীর, সবুজ, লায়লা আক্তার, অলিপুর গ্রামের মোস্তফা, নূরজাহান, এরিনা রানীসহ একাধিক যাত্রীর সাথে।

তারা বলেন, আমরা জনপ্রতি নৌকা ভাড়া ৫ টাকা ও ঘাটের ইজারাদারকে ৫ টাকা মোট ১০ টাকা দিয়ে প্রতিবার পারাপারে খেসারত দিয়ে আসছি।

উটতলী খেয়াঘাটের ইজারাদার তাফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এক সময় এ ঘাট দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার লোক পারাপার করতো। তখন ১ টাকা করে অনেক টাকা হতো। এ বছর ২ লক্ষ টাকার ইজারা নিয়ে হিমসিমে আছি। শুনেছি সেতু নির্মানের ট্রেন্ডার পেয়েছে সুরমা এন্টারপ্রাইজ, কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ ধরার কোন লক্ষণ দেখছিনা।

ঠিকাদার সুরমা এন্টারপ্রাইজ এর ম্যানেজার কাইউম হোসেন বলেন, ১০৭ কোটি টাকার বাজেট বাড়িয়ে আরো ৬০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে নানা কারনে। এ বছরের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, এ সেতু বাস্তবায়ন হলে পাশ্ববর্তী উভারামপুর, বদরপুর, মুন্সীর হাটের নদীর তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ কিন্তু থেকেই যাবে। কারন তাদের পারাপারে অনেক পথ ঘুরে আসতে হবে।

২০২০ সালে১শ’৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদগঞ্জ-হাজীগঞ্জ এর ডাকাতিয়া নদীর উপর উটতলী গুদারাঘাটে ৫শ’৫০ মিটার ব্রীজ নির্মানে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলার দুই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় তাদের মাঝে আনন্দের হাসি ফুঁটে ওঠে। তাই তারা অচিরেই সেতু নির্মানের সঠিক বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

All rights reserved © meghnapost.com