সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালই আছেন। টপিকটা দেখে চিন্তায় পড়েছেন আজ আবার কাদের বিরুদ্ধে লিখছি? চিন্তার কোন কারণ নাই, প্রতিবারের মত এবারেও আপনাদের সামনে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরবো। বর্তমানের কলিযুগে প্রেম অতি সামান্য একটা বিষয়, কিন্তু এই প্রেমকে ঘিরে চলছে অনেক অপরাধমূলক খেলা। প্রেম বলতে আপনার কি বোঝেন? একসাথে ফুসকা, আইসক্রিম খাওয়া, ঘুরে বেড়ান, নাকি অন্য কিছু? চিরস্থায়ী জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গীনি বেছে নিতে এবং দুজনের সম্পর্ককে একটি বৈধ রুপ দিতে অর্থাৎ বিয়ে একজন নারী বা একজন পুরুষ তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে যখন একে অপরকে জানার জন্য খুব কাছাকাছি আসে কোনো রকম শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া তখন তাকে প্রেম বলে। এক্ষেত্রে যদি তাদের দুজনের মধ্যে একে অপরকে ছাড় দেবার মন-মানসিকতা না থাকে এবং তারা যদি মনে করে তাদের দুজনের কখনো একসাথে থাকা সম্ভব নয় তবে তারা তাদের সম্পর্ককে আর সামনে বাড়িয়ে নেবেনা। কিন্তু বর্তমানে আমরা কি দেখছি? এখন প্রেম যতোটা না স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলছে তার চেয়ে এটি একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ কার কতোগুলো গার্লফ্রেন্ড বা কতোগুলো বয়ফ্রেন্ড আছে, কে কয়টা প্রেম করল তা নিয়ে আমরা একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছি। তবে সমাজে যে প্রকৃত প্রেমের সম্পর্ক পাওয়া যাবেনা তা নয়। অনেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্ককে বৈধ রুপ দিতে পেরেছে আর এইটাই হল প্রকৃত প্রেম। কিন্তু এখন বেশির ভাগ সম্পর্কই খুব বেশি সময় ধরে স্থায়ী রুপ লাভ করছেনা। একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও সে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে রাতে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলছে। কেন? নিশ্চয়ই সে কিছু একটা পাচ্ছেনা, তার মধ্যে একটা শূন্যতা রয়ে গেছে। একইভাবে একটি ছেলের ক্ষেত্রেও এটা দেখা যাচ্ছে। আমরা যেন প্রেম করছি মানুষকে দেখানোর জন্য যেখানে নিজেদের সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া গৌণ। টিভি চ্যানেলগুলোতে ভালোবাসাকে অতিরিক্ত গ্ল্যামার দিয়ে সুসজ্জিত করে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা সবসময় ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতা দেয়। টিভির গ্ল্যামারযুক্ত প্রেমের সম্পর্ককে যেভাবে সহজ করে দেখানো হয় বাস্তবে কিন্তু এটা অতটা সহজ নয়। যখন সম্পর্কগুলো ভেঙ্গে যায় তখন এর কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে বা এটাকে সহজভাবে মেনে নিতে না পারলে এটা আমাদের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয় যার পরিণতি খুব একটা ভালো হয়না যেটা অপ্রাপ্ত নারী বা পুরুষের জন্য ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। তাই অপেক্ষা করুন আপনার সঠিক লাইফ পার্টনার খুঁজে পেতে । এমন তো না যে প্রেম না করলে আপনি জেলে যাবেন বরং এটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখলে কোনো সমস্যাই না। আর আমাদের নিজেদের সংস্কৃতিকে অবশ্যই সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আজকাল আমরা আমাদের বাঙ্গালী সভ্যতাও ভুলে গিয়েছি। এযুগে বিয়ের আগেই ছেলে-মেয়েরা শারীরিক সম্পর্ক করতে আগ্রহী। এর কারণ কি ? জৈবিক এবং মানসিক শান্তি ? ছেলেরা যে মেয়েদের সেক্স করার জন্য জোর করে তা কিন্তু নয় । এখানে দুজনের সমান ইচ্ছে থাকে। কিন্তু আমার প্রশ্ন বিয়ের আগে কেন ডাকে ? পরে যদি ঐ ছেলেটির সাথে মেয়েটির বিয়ে না হয় ! প্রেম ভালোবাসা হওয়ার পর- ছেলেরাই মেয়েদের সাথে বেশী খারাব ব্যবহার করে থাকে। মেয়েদের সহ্য করার ক্ষমতা অনেক। নারী-পুরুষের সম্পর্ক, বিয়ের আগে বা পরে- সমাজ এবং পরিবারের অপর অনেক প্রভাব বিস্তার করে। প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক কে দার্শনিক যুক্তি তর্ক ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষনের সাথে মিলানো ঠিক হবে না।ভালোবাসা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক শারীরিক মিলন৷ সব সম্পর্কের মূলে থাকে ভালোবাসা। বিয়ের আগে যখন কোনো নারী-পুরুষ একজন আরেকজনকে বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তখন তাদের অবচেতন মনে ঘুরতে থাকে, আমি তোমার সাথে সেক্স করতে চাই। সেক্সটাই বড়। কিন্তু সরাসরি সেক্সের কথা বলাটা শোভন দেখা যায় না- তাই তারা বলে প্রেম করি, ভালোবাসি। মেয়েদেরকে আমার একটা কথা বলি, আপনারা যারা প্রেম করেন তারা আপনাদের প্রেমিককে বলুন বিয়ের আগে আমার কাছ থেকে একশো হাত দূরে থাকবে, আমার হাতও ধরবে না। চুমুতো দূরের কথা। তাহলে দেখবেন আপনার প্রেমিক আস্তে আস্তে আপনার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। তার মানে কি? সে আপনার সাথে প্রেম করে? না একদম না। সে আপনাকে চুমু দেওয়ার জন্য, জড়িয়ে ধরার জন্য প্রেমের কথা বলে। শুধু যে ছেলেরাই জড়িয়ে ধরতে চায়, চুমু দিতে চায় তা কিন্তু নয় বরং মেয়েরা আরও বেশী চায়। আপনাকে একটা বাস্তব কথা বলি পুরুষ হচ্ছে কুকুরের জাত। ঘরে হাজার ভালো খাবার থাকলেও বাইরের নোংরা খাবারে মুখ দিবেই। কাজেই বিয়ের পরও সুযোগ পেলে পুরুষগন অন্য নারীর দিকে ঝুঁকবেই। কিন্তু আপনি তো নারী, আপনাকে এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। শুনুন, কথায় আছে, অন্যের পাগল ছেড়ে দাও, নিজের পাগল ধরে রাখো। মনে রাখবেন ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে, ভালোবাসায় ভালোবেসে বেঁধে যে রাখে। শুধু মুখে i love you, ভালোবাসি এগুলো বললেই ভালোবাসা হয়না। সেক্স করা খারাপ আমি কিন্তু তা বলছি না, বিশেষ একজন বা প্রিয় মানুষের সাথে সবাইই সেক্স করতে চায়। চাওয়াটাই স্বাভাবিক। সমস্যা হলো কয়দিন পর পর একটা করে প্রেম করবো আর ভিন্ন ভিন্ন আদরের স্বাদ নিবো সেটা ঠিক না। উপযুক্ত বয়সে কোনো নারী ও পুরুষের যৌথ সম্মতিতে গড়ে ওঠা যৌন সম্পর্ক ঠিক নয়। যদিও এটাকে অনেকে আধুনিকতা মনে করেন। আজ এসব এতটা সহজ হয়েছে বন্ধু নামের সম্পর্ক থেকে। বর্তমানে দেখা যায় একটা মেয়ে ছেলে বন্ধুর সাথে ঘোরাফেরা করছে, গল্প করছে। পাশে বসছে, হাত ধরে উচু জায়গায় তুলছে, রাস্তা পার করে দিচ্ছে, মজা করে কেক মাখিয়ে দেয়া, চুল ধরা, গাল টানা ইত্যাদি করছে। এসব থেকেই শুরু হয় এই নাজায়েজ সম্পর্ক। আচ্ছা আপ্নে তো একটা নারী তাহলে আপনে কি বুঝতে পারেন না যে আপনার বন্ধু নামের ছেলেগুলো আপনার সাথে কেন এমন করে। নাকি বুঝেও চুপ করে মজা নেন? দেখুন আমি আপনাকে খারাব বলছিনা কিন্তু আপনাকে আপনার ভালো বুঝতে হবে। তারা কিন্তু আপনাকে বিয়ে করে সংসার করবে না, শুধু আপনাকে ব্যাবহার করবে। মনে রাখবেন আপনার গায়ে একটা ছোট দাগ লাগলে তা কখনো মুছবেনা, সারাজীবন আপনার সাথে থেকে যাবে। ছেলে-মেয়ের একসাথে ঘোরাফেরা সমস্যা না, সমস্যা হল বিপদ সংকেত দেখে দূরে থাকা। সেক্স জীবনের একটা বিশেষ অংশ তবে সেটা জেন জায়েজ হয়। আপনি বিয়ে করেছেন কিন্তু আপনার স্বামী/স্ত্রি কে তার অধিকার দিবেন না তা কিন্তু ঠিক নয়। তার অধিকার তাকে দিতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। একটা সময় ভালোবাসার ভাষা ছিল চিঠি। চিঠি দিয়েই প্রেম নিবেদন করা হতো। এক সময় প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের হাতে বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে ভালোবাসার মানুষের নাম খোদাই করে রাখতো। এতে ঝরতো রক্ত। কিন্তু ভালোবাসার টান শত কষ্টকে ভুলিয়ে দিত। সে সময় লুকোচুরি ছিল প্রবল। কেউ জেনে যাবে, দেখে ফেলবে এই ভয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা হতো খুব। সেই লুকোচুরি এখন আর নেই। নেই সেই ভয়। এখন প্রকাশ্যেই প্রেম করছেন ছেলেমেয়েরা। অনেক ক্ষেত্রেই তা জানেন মা-বাবা। এমনকি চেনা-অচেনা সবাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকা যৌথ ছবি দিচ্ছেন। একজন-আরেকজনকে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন সম্বোধনে ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী বলেন, প্রেম পবিত্র ও সৌন্দর্য্যের নাম। আমরা প্রেমকে পবিত্র হিসেবে দেখে আসছি চিরকাল। প্রেমের জন্য কতো মানুষ জীবন দিয়েছে। কিন্তু এখন আর তা বজায় থাকছে না। প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে তা না, তবে পবিত্রতা যেন থাকছে না। প্রেমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ছেলেমেয়েতে যখন প্রেম হতো তার উদ্দেশ্য থাকতো বিয়ে করা। বিয়ে হলে তারা সুখী জীবনযাপন করবে। কিন্তু এখন বিয়ে করবো এরকম প্রবল উদ্দেশ্য যেন হারিয়ে গেছে। এখন ছেলেমেয়েরা প্রেম করে ফুর্তি করবে, নাচ-গান করবে, বেড়াতে যাবে- এরকম উদ্দেশ্য নিয়ে। এটাকে আধুনিকতা বলবো না। বলবো আধুনিকতার দোহাই দিয়ে প্রেমের নামে খেলা করা হচ্ছে যেন। আগেকার দিনে প্রেমিক-প্রেমিকারা চিঠি লিখতো। তৃতীয় কারও মাধ্যমে কথা বলতো। এখন মুহূর্তে মুহূর্তে কথা হচ্ছে ফোনে-ইন্টারনেটে। এখন প্রেমের কোনো কিছুই গোপন থাকছে না। প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রকাশ্যেই প্রেম করে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, প্রেম থাকা উচিত। পবিত্রতা। প্রেমে যেন সম্মান থাকে। অন্তত একটি জীবনকে যেন সুখী-সফল করা যায়। প্রেম সেভাবেই করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের এই প্রাক্তন অধ্যাপক। ইসলামে মনের সাথে মনের মিল হলে কবুল, আর হিন্দুতে সিঁদুর পড়ালেই বিয়ে হয়ে যেত। কিন্তু এখন এসবের মর্যাদা নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে আরও দেখা যায় ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা হয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একসাথে অনেক সময় কাঁটায় আর এসব কিছুই পরিবারের মতামত না শুনেই। দীর্ঘদিন সম্পর্ক চলার পর যখন বিয়ের বিষয় আসে তখন অধিকাংশ নারী-পুরুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর এতে নারীদের অংশ বেশি। যখন বিয়ে করে সংসারের কথা আসে তখন তাদের পরিবারের কথা মনে পড়ে, বাবা-মার সম্মানের কথা মনে আসে। আমার প্রশ্ন হল যখন প্রেম করা হত, ঘুরে বেড়ান, আরও কত কি হত তখন কি পরিবারের সম্মানের কথা মনে হতনা? বিয়ে-সংসার একটা পবিত্র সম্মানের সম্পর্ক আর এই কাজ করার সময় কেন এত বাধা-বারন, কেন এত শর্ত সাপেক্ষ? আবার অনেকে তো আছেন যারা প্রেম তো যাকে তাকে করে কিন্তু বিয়ে করার সময় ছেলে কি করে, কত আয়, কি কি আছে সব দেখে শুনে বিয়ে করেন। ভালোবাসাটা সহজ কিন্তু তাকে টিকিয়ে রাখাটা অনেক কঠিন। আপনি যদি ত্যাগ করতে না শেখেন তাহলে কখনো ভালবাসতে পারবেন না। হিন্দুদের বিয়ের পর শাঁখা পড়তে হয়, আর এই শাঁখাটা তারা অনেক সাবধানে যত্নে রাখেন , কারণ একটু আঘাতে তা ভেঙে যায়, কিন্তু ভালোবাসাটা যদি একবার ভেঙে যায় তা আর ফিরে আসেনা। সুতরাং যাকে ভালবাসবেন তাকে কখনো চোখের আড়াল করবেননা। যারা আজ এই লেখাটি পড়লেন তাদের আমি একটা কথাই বলতে চাই, প্রেম কিন্তু স্বর্গ থেকে আসা। প্রেমের নামে এসব ধারাপাত অন্যর সাথে করবেন না। এতে অনেকে সহ্য করতে না পেরে জীবন দিয়ে দিতে পারে। আর এজন্য কিন্তু দায়ী শুধু মাত্র আপনি থাকবেন। নারী-পুরুষ উভয়কে বলছি প্রেম করুন কিন্তু তাতে যেন পবিত্রতা থাকে। লেখাটি পড়ে যদি একজনও বদলে সঠিক পথে আসেন তাহলেই সার্থক হবে।