শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধিঃ নীলফামারীতে নতুন করে এক নারী সহ আরো পাঁচজনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ(রমেক) হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেছেন। এনিয়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫জন।
যদিও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ মোট আক্রান্তে সংখ্যা বলছেন ১৪জন।তবে স্থানীয় সুত্রে জেলার সৈয়দপুরের এক বাসিন্দা সহ ১৫জনই আক্রান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ের যতেষ্ট অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ রনজিৎ কুমার বর্মন জানান, দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী মঙ্গলবার(২৮ এপ্রিল) সকালে ও বিকেলে জলঢাকা উপজেলার এক নারী ও এক শিক্ষক সহ ৩ জন ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিপোর্টে জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার ১জন সহ চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে এই রিপোর্ট প্রকাশ হবার আগেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ওই ব্যক্তি গত ২৬ এপ্রিল মৃত্যু বরন করেন।
জানা গেছে,৬০ বছরের ওই ব্যক্তি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সোহরাব মাষ্টারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলের গত ২৫ এপ্রিল পেটে ব্যথা নিয়ে পরিবারের লোকজন তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ এপ্রিল সেই ব্যক্তির মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যু পর রংপুর মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তার নমুনা সংগ্রহ করে মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে প্রেরণ করেন।মঙ্গলবার(২৮এপ্রিল) মৃত সেই ব্যাক্তির শরীরের নমুনায় করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে।
অপরদিকে একইদিনের(২৮এপ্রিল) রিপোর্টে জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনার ডাঙ্গাপাড়া দুইজন ও সদরের একজন সহ নতুন করে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।তাদের তিনজনকে নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হাসান রেজওয়ানুল কবীর।
অন্যদিকে নীলফামারীর সৈয়দপুরে নোভেল করোনা ভাইরাস পজেটিভ একজন রোগী পাওয়া গেছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা গোপন করে বাড়িতে অবস্থানকারী ওই ব্যক্তিকে মঙ্গলবার(২৮ এপ্রিল) ভোর রাত ৪ টার দিকে শহরের কাজিপাড়া থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী রংপুরের তাঁরাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট।করোনা ভাইরাস প্রাদূর্ভাবের পর থেকে তিনি সন্দেহভাজনদের করোনা নমুনা সংগ্রহের কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে নমুনা সংগ্রহকারী দলের ৩ জনের সন্দেহ হলে নিজ উদ্যোগেই তাদের করোনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন মনে করে নিজেদের নমুনাও প্রেরণ করেন রংপুরে। গত ২৭ এপ্রিল সন্ধায় তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমসহ ২ জনের রিপোর্টে করোনা পজেটিভ আসে। সৈয়দপুর শহরের কাজিপাড়া পানির ট্যাংকির পাশের এক বাড়িতে তিনি স্ব-পরিবারে ভাড়া থাকেন ও প্রতিদিন রংপুর তাঁরাগঞ্জ থেকে সৈয়দপুরে যাতায়াত করতেন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রশাসনের সহযোগিতায় গত সোমবার রাতে তার বাড়ি থেকে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে ভোর ৪ টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সে সাথে পরিবারের অন্যান্য ৪ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করে রংপুরে পাঠানো হবে।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর করোনা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ শহিদুজ্জামান জানান, করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়তো তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু বাড়িতে অবস্থান করে পরিবারের সকলকেই ঝুঁকিতে ফেলেছেন। যে কারণে এখন তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ জানান, একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে তিনি খুব ভাল করেই অবগত আছেন। তারপরও তিনি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে গেছেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে তিনি নিজেই করোনা পজেটিভ আক্রান্ত হয়েছেন। এই প্রথম সৈয়দপুরে করোনায় আক্রান্ত একজনকে পাওয়া গেল।
এদিকে জেলায় মোট ১৫জন আক্রান্তের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার খবর পাওয়া গেছে।জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ রনজিৎ কুমার বর্মন জানান, আক্রান্তরা বেশিরভাগ ঢাকা,নারায়নগঞ্জ,গাজীপুর,কুমিল্লা থেকে নীলফামারীতে আসে। আক্রান্ত্রদের মধ্যে জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও ডিমলার দুইজন সহ ৪জন সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। তাদের দুই দফায় নমুনা পরীক্ষা শেষে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর মঙ্গলবার হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ছাড়পত্র দেয়া হলে তারা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যায়।
ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্র হত্যা: নীলফামারীতে সড়ক অবরোধ
বিশেষ প্রতিনিধঃনীলফামারী ব্যবসা সংক্রান্ত টাকা লেনদেনের বিরোধকে কেন্দ্র করে মুছা(২১) নামের এক কলেজ ছাত্রকে ট্রাক্টর চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার(২৮ এপ্রিল) বিকেলে নীলফামারী সদরের কচুকাটা এলাকায় মানুষজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে।
জানা যায়, সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের সর্দারপাড়ার মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে ও স্থানীয় কলেজের ছাত্র মুছার সঙ্গে একই এলাকার মার্শাল মিয়ার ট্রাক্টর ও বালুর যৌথ ব্যবসা রয়েছে। মুছা ওই ব্যবসায় মার্শাল মিয়ার কাছে ২০ হাজার টাকা পায়। কিন্তু সে টাকা দিতে গড়িমসি করছিল। এ অবস্থায় গতকাল সোমবার(২৭ এপ্রিল) বিকেলে মুছা পাওনা টাকা উত্তোলনে মার্শাল মিয়ার ছেলে আতিক (১৬) ট্রাক্টর চালিয়ে বাজারে এলে তাকে থামিয়ে টাকা দাবি করে মুছা। এ সময় তাদের মধ্যে কথাকাটির এক পর্যায় আতিক তার বাবা মার্শালকে মোবাইলে ডেকে আনে। এ সময় মার্শাল তার ছেলেকে হুকুম দেয় ট্রাক্টর চাপা দিয়ে মুছাকে মেরে ফেলতে। এরপর বাবার হুকুম পেয়ে আতিক ট্রাক্টর চালিয়ে মুছাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী মুছাকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর আধুনিক হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে রংপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে মুছা মারা যায়।কচুকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল রউফ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মুছার মৃত্যুর খবরের পর এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে পড়লে মার্শাল ও তার ছেলে আতিক বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এরপর এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।নীলফামারী থানার ওসি মমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনার জড়িতদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।
ফলোআপঃ-পুলিশের মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে নীলফামারীর ৬ গ্রামের মানুষ
ক্রাইম রিপোর্টার॥নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।গ্রামের পুরুষেরা গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছাড়া। পবিত্র রমজান মাস ও তার উপরে করোনা ভাইরাস এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার(২৭এপ্রিল) মধ্য রাতে পুলিশের এমন ঘটনায় উক্ত এলাকার মানুষদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার(২৮ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে সাংবাদিকরা গিয়ে দেখেন ওই এলাকার কালিকাপুর মাঝাপাড়া, বালাপাড়া, সুরিপাড়া, ময়দানপাড়া, গফুরপাড়া ও ওমরপাড়া গ্রামে বৃদ্ধ ছাড়া কোন পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই।নিস্তদ্ধ গ্রামের নারীরা নিজ নিজ বাড়িতে আতঙ্কের মধ্যে অবস্থান করছেন। অনেকে বয়স্ক গৃহবধু জানান, গভীর রাতে পুলিশ সদস্যরা এসে পাকিস্তানী বাহিনীর মত ব্যবহার করতে থাকে।পুলিশ বিভিন্ন বাড়ির ঘর ও জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর করেছেন। এমনকি একজনের ঘরে থাকা ২০ হাজার টাকা খোয়া যায়। বিকেল ৪টার দিকে দেখা যায় পুলিশের একটি দল পুনরায় ওই সকল গ্রামে আসামী ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে।
এর আগে গতকাল সোমবার(২৭ এপ্রিল) দুপুরে পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর হাটখোলা গ্রামের ঈদগা ময়দান নদী ভাঙ্গনের হাত হতে রক্ষার্থে বালু দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ নির্মানে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে ওসি(তদন্ত) সহ তিনজন আহত হয়।ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যেই ২৫ জনকে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত দেড় শতাধিক গ্রামবাসীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন পুলিশ। মামলা নম্বর-১০।
এলাকাবাসী জানায়, উক্ত ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থানায় পুলিশের পক্ষে এসআই আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ এনে উক্ত এলাকার নামীয় ২৫ জন ও অজ্ঞাত দেড় হাজার জনকে আসামী করা হয় তাতে। ওই মামলার আসামী ধরতে সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ অভিযানের নামে বাড়ি বাড়ি তান্ডব চালিয়ে ভাঙ্গচুর করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধু অভিযোগ করে জানান, তিনি সিজারের রোগী। তার স্বামী রাতে বাড়িত ছিলনা। মধ্যরাতে পুলিশ এসে দরজা খুলতে বলেন। আমি সিজাররোগী হওয়ায় বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। পুলিশ আমার ঘরের টিনের বেড়া ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে আমাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমি তাদের বলি আমি সিজার রোগী। এরপর আমার ঘর তল্লাশী চালায় তারা। সকালে উঠে দেখি ঘরের বিছানার নিচে রক্ষিত ২০ হাজার টাকা নেই।
গ্রামের বয়স্ক এক স্কুল শিক্ষক জানান, পুলিশ এসে আমার বাড়ির দরজায় জোড়ে জোড় লাথি মারতে থাকে। আমি উঠে দরজা খুলে দিলে তারা আমাকে হাতকড়ি পড়িয়ে আমার দশম শ্রেনী পড়ুয়া ছেলেকে খুঁজতে থাকে। পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধনের কার্ডটি জোড়পূর্বক নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কিশোরীগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের উপর হামলার ঘটনার মামলায় পুলিশ আসামী ধরতে অভিযান চালিয়েছে। মামলার আসামীরা সকলে পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন কোনো গ্রামে পুলিশ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেনি।