বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

নোটিশঃ
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সাংবাদিক  নিয়োগসহ পরিচয় পত্র নবায়ণ চলছে।

সম্প্রীতির সিলেট,আশংকা বেড়েই চলছে

সিলেট সংবাদাদাতাঃ ভোট গ্রহন শুরু –নগরবাসী মেতে উঠবেন ভোট উৎসবে। সিলেটকে বলা হয় ‘সম্প্রীতির শহর’। হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.)-এর এই পুণ্যভূমিতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের যেমন অসাম্প্রদায়িক অবস্থান রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরাও এখানে সহাবস্থান করেন। জাতীয় রাজনীতির উত্তাপ, প্রতিপক্ষের প্রতি কথার বাণ, সংঘাত এসব খুব কম সময়ই সিলেটে দেখা যায়। কিন্তু সেই সম্প্রীতির নগরীতে আজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করছে। আজ একযোগে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্য দুই সিটির তুলনায় সিলেটে ভোটের মাঠের পরিবেশ ছিল অনেক সহনীয়, শান্তিপূর্ণ। কিন্তু শেষ সময়ে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, সমর্থকদের মারামারি সব কিছু মিলে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের পরিবেশ এখন উত্তপ্ত। সাধারণ মানুষ আজ ভোটের দিন পরিস্থিতি কি হয়, তা নিয়েই আতঙ্কে। আর বিএনপি নেতাকর্মীদের তাড়া করছে ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা সেই আতঙ্ক। সামগ্রিক বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন শক্ত ভূমিকা রাখতে পারলে সিলেটে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হতো, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করতো না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও ভোটের আগেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সরব প্রার্থীরা, ভোটাররা নীরব
আজ সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীরা সরব থাকলেও ভোটাররা এখনো নীরব রয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে উঠে জরিপের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জরিপের সাথেও মিল পাওয়া গেছে। জয় বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৩ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন। এই জনমত জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উল্লেখ করে জয় তার ফেবুবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, সিলেটে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে আছেন ৩৩ শতাংশ ভোটার, আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে আছেন ২৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার, ১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রার্থীরা অন্যান্য প্রার্থীদের পক্ষে রয়েছেন। এছাড়া ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার জরিপে উত্তর দেননি এবং ২৩ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে সিসিক মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭ প্রার্থীর মাঠে রয়েছেন ৬ জন। বিএননপির বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যান। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরব থাকলেও অনেকটাই নীরব এখানকার ২৭টি ওয়ার্ডের ভোটাররা। কে মেয়র হবেন, তার চেয়েও ভোট কেমন হবে, সে প্রশ্নটিই এখন নগরীর বেশিরভাগ ভোটারের কাছেই মুখ্য হয়ে ওঠেছে। ভোটের দিনসহ আগে ও পরের আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে নাগরিকদের মধ্যে। এরই মধ্যে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এবং বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাককে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জনগণের রায় ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে সরকার ও প্রশাসন এমন অভিযোগ আরিফুল হক চৌধুরীর। পুরো পরিস্থিতিকে ভিন্ন মোড় দেয়ার চেষ্টায় সরকার সমর্থিতরা, হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আমার নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে, এমন অভিযোগও তার।

কে হাসবেন শেষ হাসি?
আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট। এই সিলেট থেকেই নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে সকল রাজনৈতিক দল। সিলেট-১ আসনে যে রাজনৈতিক দল জয়ী হয় তারাই সরকার গঠন করে। এ কারণেই জাতীয় রাজনীতিতেও সিলেটের শুরুত্ব অপরিসীম। সিসিক নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। সিসিক নির্বাচনের সকল প্রার্থী ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা শেষ করেছেন। ভোটারদের দিয়েছেন নানান প্রতিশ্রুতি। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ প্রার্থী। যদিও ইতোমধ্যে একজন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন, কিন্তু তার প্রতীক থাকছে নির্বাচনি ব্যালটে। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেনÑ আওয়ামী লীগ মনোনীত ও মহাজোট সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট (একাংশ) সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), নাগরিক কমিটি মনোনীত জামায়াত নেতা অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন (হাতপাখা), সিপিবি-বাসদ মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর (মই), স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী এহসানুল হক তাহের, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র বদরুজ্জামান সেলিম (তিনি সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ালেও ব্যালটে তার বাস গাড়ি প্রতীক রয়েছে)। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনি সামগ্রী। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আয়োজক সংস্থা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা প্রত্যাশা করছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। একইসঙ্গে নির্বাচনে কারচুপি ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচনি পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে টহল দিচ্ছেন বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। চারদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নগরজুড়ে একটিই আলোচনা কে হচ্ছেন নগরপিতা। শুধু অপেক্ষা ভোট গণনার। সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের নির্বাচনে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশ নেওয়ায় তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের শীর্ষ পদটি দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠানের কারণে দল দুটির আগ্রহ বেড়েছে। আবহ তৈরি হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আমাদের জিটিবি নিউজ ২৪ কে জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। নির্বাচন কমিশনের ভাষায়Ñ এই ভোট কেন্দ্রের নাম ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’। ঝুঁকিপূর্ণ ৮০ কেন্দ্রের মধ্যে শুধু কোতোয়ালি থানা এলাকায়ই রয়েছে ৪০টি ভোটকেন্দ্র। সূত্র জানায়, কোতোয়ালি থানা এলাকায় ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৭টি সাধারণ, দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায় ২টি ওয়ার্ডের ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ, জালালাবাদ থানা এলাকার ১টি ওয়ার্ডের ৪টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ, এয়ারপোর্ট থানা এলাকার ৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১১টি ও সাধারণ কেন্দ্র ১২টি, মোগলাবাজার থানা এলাকার ১টি ওয়ার্ডের ৫ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ ও শাহপরান থানা এলাকার ৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ১৪টি ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৫টি। ১৩৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ৬৭টি, দক্ষিণ সুরমা থানায় ১২টি, জালালাবাদ থানায় ৮টি, এয়ারপোর্ট থানায় ২৩টি, মোগলাবাজার থানায় ৫টি ও শাহপরান থানায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৯টি।

নিউজটি শেয়ার করুন

All rights reserved © meghnapost.com